রবীন্দ্রনাথ ও প্রস্টেট
===========
এক্ষণে রাবীন্দ্রিক কুলে প্রশ্ন উঠিয়াছে, রবীন্দ্রনাথের প্রস্টেটের ঐতিহাসিকতা সম্বন্ধে। রবীন্দ্রনাথের প্রস্টেট বর্তমান ছিল কিনা,থাকিলে তাহার ঐতিহাসিকতা কতদূর অনুমোদিত, কতদূর দুষ্ট রাবীন্দ্রিকের স্বকপোলকল্পিত, তাহা নিরূপণ করা আবশ্যক। সকল প্রশ্নেরই মূলে প্রবেশ করা আবশ্যক, অতএব রবীন্দ্রনাথের প্রস্টেটের ঐতিহাসিকতা প্রমাণ করিতে হইলে প্রথমে রবীন্দ্রনাথের ঐতিহাসিকতা নিরূপণ করিতে হইবে। প্রাচীন নথি, পুরসভার সরকারী মহাফেজখানা, চর্যাচর্যবিনিশ্চয় পুঁথি, ক্ষেমঙ্করী কাব্য প্রভৃতি মূল্যবান ঐতিহাসিক উপাদান বিশ্লেষণ করিয়া যে তথ্য উদ্ধার হয়, তাহাতে একপ্রকার নিশ্চিত করিয়াই বলা যায়, যে রবীন্দ্রনাথ নামে অন্ততঃ তিনজন ব্যাক্তি এই বঙ্গভূমিতেই স্থান ও কালভেদে আবির্ভূত হইয়াছেন। প্রথম রবীন্দ্রনাথ একাদশ কি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে (অধ্যাপক সুনীতিকুমার বলেন একাদশ, কিন্তু অধ্যাপক সুকুমার সেন বলেন উহা অবশ্যই ত্রয়োদশ; পক্ষীশাস্ত্রজ্ঞ কুলভুশন্ডী স্বামী তাহার পোষা কাকের গণনার দ্বারা উল্লিখিত রবীন্দ্রনাথের সময় নির্ধারণ করেছেন ১৪৫৬ শক ৪৯ মঘা ৬১/২ অমাবস্যা শুক্লা দ্বিতীয়া চত্বারিংশৎ প্রহর হিংরজঃ) রাজা বসন্তসেনার (মতভেদে বল্লাল সেন অথবা বিলকিস শাহা) রাজত্বকালে বর্তমান ছিলেন। অকারণকীর্তন পুঁথিতে এই রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কেই বলা হইয়াছে ‘ ইদং মঅনসা বাচা ... ( উইতে কাটা অংশ) ... অর্বাচীনস্য আস্ফালনং’ । অতএব স্পষ্টতই (কিরূপে স্পষ্ট তাহা অস্পষ্ট) আমাদের প্রশ্নে বিবেচ্য রবীন্দ্রনাথ এই রবীন্দ্রনাথ নহেন । দ্বিতীয় রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে পন্ডিতেরা নানাবিধ মত পোষণ করেন। অধ্যাপক ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ তাহার ‘রবীন্দ্র অনুষঙ্গ’ প্রবন্ধে লিখিয়াছেন যে এই দ্বিতীয় রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কে লিখিয়াছেন যে এই রবীন্দ্রনাথের জন্ম পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে তৎকালীন পৌন্ড্র প্রদেশের ভুরশুনা গ্রামে, বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুরে। পন্ডিতপ্রবর কীট্টকভট্টে তাহার ‘দুর্ধর্ষচরিত’ গ্রন্থে লিখিয়াছেন যে এই দ্বিতীয় রবীন্দ্রনাথ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে ব্যুৎপত্তিলাভ করেন। কিন্তু উতঙ্কসূরি বর্ণিত প্রাচীন ‘বরাহবিপর্যয়’ গ্রন্থে নালন্দার পরিবর্তে তক্ষশীলা উল্লিখিত রহিয়াছে। উতঙ্কসূরির পূর্বসূরি অশঙ্কসূরি অবশ্য কহিয়া গিয়াছেন যে এই দ্বিতীয় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন নিরক্ষর। যাহা হউক, নীহাররঞ্জন রায় তাহার বাঙ্গালির ইতিহাস মধ্যখন্ডে মন্তব্য করিয়াছেন যে এই দ্বিতীয় রবীন্দ্রনাথের পুরা নাম ছিল রবীন্দ্রনাথ ধাড়া। যেহেতু আমাদের আলোচ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অতএব এই রবীন্দ্রনাথ ধাড়াকে নিয়ে সম্যক আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। অতএব তৃতীয় রবীন্দ্রনাথই আদি রবীন্দ্রনাথ, এ কথা একরূপ প্রমাণিত হইল। এই তৃতীয় রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কে তাহার জীবনীকার প্রশান্তকুমার পাল মহাশয় বলিয়াছেন, যে ১৮৬৩ খ্রীস্টাব্দে বৈশাখ মাসে কলিকাতায় জোড়াসাঁকোর আদি বাড়িতেই তাহার জন্ম। কিন্তু উপাদান ভেদে এই তারিখও ভিন্ন ভিন্ন। মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের দপ্তরিখানায় রক্ষিত বহু প্রাচীন উত্তর পত্রে উনবিংশ থেকে বিংশ শতকের বিভিন্ন সনে তাহার জন্ম বলে উল্লিখিত আছে। তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এমনও লিখিয়াছেন, রবীন্দ্রনাথ বর্তমান বীরভূমে জন্মগ্রহণ করেন, যৌবনে বহু কু আচার পূর্বক হ্রীচক রোগে আক্রান্ত হন এবং বার্ধক্যে পুরস্কারেচ্ছু হইয়া আলফ্রেড নোবেলের অনূঢ়া দৌহিত্রীর পাণিগ্রহণ করেন। আচার্য নিমাইসাধন বসুর মতে ও সকল তথ্যসূত্রের কোন ঐতিহাসিক গুরুত্ব নাই, উহাদের লেখক বিকৃতমস্তিষ্ক পরীক্ষার্থী মাত্র, এবং রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তাহার ‘কারণে অকারণে রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থই প্রামাণ্য। এবিষয়ে স্মর্তব্য তৎকালীন জোড়াসাঁকো, বর্তমান মহম্মদ আলি পার্কের ফুচকা বিক্রেতা টাইফয়েড টেকিলালের জোবানবন্দি – “জি হজৌর! রবিন্দরনাথকো তো হামনেহি পানিপুরি খিলাকে বড়া কিয়া।“ অবশ্য পূর্বোল্লিখিত কুলভুশন্ডি স্বামির কাক এসকলই অস্বীকার করিয়া এই রবীন্দ্রনাথকে ধৃতরাষ্ট্রের সমসাময়িক বলিয়া নির্ধারণ করিয়াছেন। উতঙ্কসুরিরও সেই মত। এই সকল বিতর্কের সমাধান পাওয়া যায় যখন পন্ডিতবর উলুবিহারী তর্কচঞ্চু রাঢ় সমতটের খননকার্য সমাধা করিয়া একটি বিশেষ সূত্র লাভ করেন। সেই প্রাচীন তৈজসপত্রে ছিল অসুরকায় এক দস্যুর ছবি, এবং প্রাচীন মাগধী হিন্দিতে লিখিত ‘ইয়ে হাত মুঝে দে দে ঠাকুর’। ওই তৈজসপত্রের অঙ্গার রাসায়নিক উপায়ে বিশ্লেষণ করিয়া জানা গেছে, উহার সময়কাল ১৯৭৫ খ্রীস্টাব্দ। অতএব স্পষ্টতই প্রমাণিত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিংশ শতাব্দীর শেষভাগের মানুষ এবং অন্তিমকালে দস্যু কর্তৃক বাহু ছিন্ন হইয়া তাহার মৃত্যু হয়। দস্যুর নাম ‘রমেশ সিপ্পি’ বলিয়াও তৈজসপত্রে উল্লিখিত ছিল। এইরূপে রবীন্দ্রনাথের ঐতিহাসিকতা প্রমাণিত হল।
এক্ষণে রবীন্দ্রনাথের প্রস্টেটের কথাটা উঠিল। প্রস্টেটজনিত সমস্যা ছাড়াও নানাবিধ রোগ ছিল রবীন্দ্রনাথের চিরসঙ্গী। ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থের চতুর্বিংশতি অধ্যায়ের পঞ্চদশ স্কন্ধে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং উল্লেখ করেছেন, ‘ছোটজামাইটি আমার ফাইলেরিয়ার উপর ফারাঙ্কল’, অর্থাৎ গোদের উপর বিষফোঁড়া । এর থেকে প্রমাণিত হয়, ফাইলেরিয়া এবং ফারাঙ্কল উভয় দুর্যোগ তাহার কপালে ঘটিয়াছিল। কীট্টকভট্টের দুর্ধর্ষচরিত গ্রন্থে আরো পাওয়া যায় যে তিনি বিভিন্নসময়ে মধুমেহ, উদরী, কামলা এবং এরিসিপেলাস রোগে আক্রান্ত হন। প্রমাণস্বরূপ তিনি লিখিয়াছেন ‘মধুমেহারী উদরানাং ... মাঝের দুই পাতা কীটদষ্ট ... অস্তি গোদাবরীতীরে বিশালঃ শাল্মলীতরু।“ অবশ্য উতঙ্কসূরির মতে কীট্টকভট্টের ও সকল কথাই দ্বেষপ্রসূত, রবীন্দ্রনাথ এক আর্থ্রাইটিস ভিন্ন রোগমুক্ত ছিলেন।
এক্ষণে প্রস্টেটের সঙ্গে পাঠকদের পরিচয় করাইয়া দেওয়া যাক। প্রস্টেট একটি ত্রিকোণাকার গ্রন্থি। আমরা আচার্য সুকুমার সেন ও সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে পুনঃপুনঃ পত্র লিখিয়াও প্রস্টেটের বাঙ্গালা প্রতিশব্দ পাই নাই। অধ্যাপক খগেন্দ্রনাথ বিদ্যাবাগীশ তাহার অভিধানে প্রস্টেট এর বাঙ্গালা করিয়াছেন ‘রেচনেক্ষু’, কিন্তু তাহার পরে কেহই এই প্রতিশব্দ ব্যবহার করে নাই। দুলাল চন্দ্র সাঁতরা তাহার জীবনবিজ্ঞান বইতে প্রস্টেটের অতি সুন্দর বাঙ্গালা করিয়াছেন, ‘প্রস্টেট গ্রন্থি’। আমরা তাহাই ব্যবহার করিব।
রবীন্দ্রনাথের প্রস্টেটের প্রথম উল্লেখ পাই শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ‘সময়ে অসময়ে রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থে। সেখানে লেখক মন্তব্য করেছেন, প্রস্টেটের বৃদ্ধিজনিত কারণে বৃদ্ধবয়সে রবীন্দ্রনাথ পীড়িত হয়ে পড়েন। এই মন্তব্যের ঐতিহাসিকতার প্রমাণ স্বরূপ লেখক কীট্টকভট্ট, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ প্রভৃতিকে উদ্ধৃত করেছেন। কীট্টকভট্টের ‘কা নিরুৎসায়া বচনে পরা চৈবাপরা চ’ কে লেখক বাঙ্গালা করিয়াছেন ‘প্রস্টেটের কথা ভাবিয়া রবীন্দ্রনাথ চা পানে নিরুৎসাহী ছিলেন’। ক্ষীরোদপ্রসাদের স্মৃতিকথাতেও পাই, একদিন রবীন্দ্রনাথ নাকি মন্তব্য করেন – “আজ কর্পোরেশনের কলে জল বড় আস্তে পড়ছিল হে, বাড়ির পাম্পের প্রেশারটা চেক করাতে হবে, মিস্ত্রি ডাকো।“ ক্ষীরোদপ্রসাদ ইঙ্গিতে সমস্তই বুঝিয়া ডঃ বিধানচন্দ্র রায়কে প্রস্টেট চেক আপ করাতে লহিয়া আসিলেন। অবশ্য তাহাতে রবীন্দ্রনাথের প্রতিক্রিয়া কি হইয়াছিল তাহা আর ক্ষীরোদপ্রসাদ লিখিয়া যান নাই।
এই সমস্ত তথ্যের প্রামাণিকতার অভাবে রবীন্দ্রনাথের প্রস্টেটের সমস্যার সত্যাসত্য নির্ধারণ করা বড়ই দুষ্কর হইয়াছে। এবিষয়ে বৈজ্ঞানিক সুকান্ত গাঙ্গুলি এক মহতী প্রচেষ্টায় উদ্যোগী হইয়াছেন। তাহার মতে, শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রনাথের আম্রকুঞ্জের ঘরে কবির জীবৎকালে যে সমস্ত অতিবেগুনী রশ্মি তাহার প্রস্টেট হইতে নির্গত হইতেছিল, তাহার ক্ষীণ প্রতিবিম্ব এখনো সেই ঘরের দেওয়াল হতে দেওয়ালে অবিরাম প্রতিফলিত হইয়াছে। যদি ওই দেওয়ালের আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করানো হয়, তাহলে তাহার আবিষ্কৃত ‘ফুটোস্কোপ’ যন্ত্র দ্বারা তিনি সেই ক্ষীণ রশ্মির অজারিকাশক্তি গণনা করিয়া রবীন্দ্রনাথের প্রস্টেটের আয়তন বলিয়া দিতে পারিবেন। তিনি ইতোমধ্যেই বিশ্বভারতীর উপাচার্যের নিকট এই মর্মে একটি দরখাস্ত লিখিয়াছেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ, উপাচার্য লাগাতার ঘেরাও কর্মসূচীতে মাসাধিককাল তাহার আপিসেই আবদ্ধ হইয়া আছেন, দরখাস্ত এখনো তাহার নিকট পৌঁছায় নাই।
কিন্তু শুধু কি বৈজ্ঞানিক প্রমাণের উপর নির্ভর করিয়া রবীন্দ্রনাথের প্রস্টেটের সত্য নিরূপণ করিতে হইবে? রাজ্য সরকার এই প্রশ্নের মীমাংসার্থে প্রখ্যাত রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ পবিত্র সরকারের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটি আড়াই বৎসর কাল যাবৎ তিন সহস্র চার শত বত্রিশ জন প্রস্টেট রুগীকে পর্যবেক্ষণ করেন, এবং তাহাদের নিয়মিত কাব্যচর্চায় উৎসাহিত করা হয়। সমীক্ষা শেষে কমিটির সভ্যগণ ওই সমস্ত রুগীর লিখিত কাব্য এবং রবীন্দ্রনাথের অন্তিম কালের কাব্যের তুলনামূলক আলোচনা করেন। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে রাইম্যানিয়ান এবং ভাস্করাচার্যের সন্মিলিত সঙ্খ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে প্রমাণিত হয়, রবীন্দ্রনাথের ‘রোগশয্যায়’ ও ‘আরোগ্য’ কাব্যগ্রন্থটি প্রস্টেটের সমস্যা ব্যতীত লেখা অসম্ভব। অতএব প্রমাণিত হইল, রবীন্দ্রনাথ প্রস্টেটজনিতে পীড়ায় আক্রান্ত ছিলেন।
2 comments:
Guru Bhasa porte gie to dat khule galo... oi dulal chandra santra ta puro kantar case kore diecho....
kintu 3no robindranath sese prostate ei ponchobhute bilin holo kina ar hole tar prostate ta sei ponchobhuter kon dosa prapto holo boja gelo na... ekta hat to agei bad gechilo sippir doyay...
Post a Comment